মণিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি: শীতের আগমনের সঙ্গে সঙ্গেই যশোরের মণিরামপুর উপজেলার মাঠজুড়ে সরিষা ফুলের সৌন্দর্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। পুরো মাঠ জুড়ে রঙিন দৃশ্য, আর বাতাসে দুলতে থাকা ফুলের মাঠে মৌমাছি চাষ করছে স্থানীয়রা। সরিষা রেণুর আকৃষ্টে মৌমাছি মধু সংগ্রহ করে। আর সেই মধু বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে লাভবান হচ্ছেন মৌচাষিরা।

উপজেলার মশ্মিমনগর ইউনিয়নের রামপুর গ্রামের মেইন রাস্তার পাশে সওকত আলীর ১২ শতক জমি এক মাসের জন্য লিজ নিয়ে ১৫০টি বাক্স স্থাপন করেছেন মৌচাষি মোমিনুর আলী। এছাড়াও মধু চাষে মোমিনুর আলীর সঙ্গে কাজ করছেন সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার মৌচাষি সুমন মাঝি ও রবিউল ইসলাম। সরিষা ফুলের মৌসুমে এসব বাক্স থেকেই সংগ্রহ করা হচ্ছে খাঁটি মধু।


চাষিরা জানান, এপিস সেরানা জাতের মৌমাছি (খুদে মৌমাছি) ব্যবহার করে আধুনিক পদ্ধতিতে মধু সংগ্রহ করা হচ্ছে। এ প্রজাতির মৌমাছি বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। মধু সংগ্রহের জন্য সরিষা ক্ষেতের আশপাশের নিরাপদ জায়গায় কাঠের তৈরি বাক্সগুলো বিছিয়ে রাখা হয়। একেকটি বাক্সে মোম দিয়ে তৈরি ছয় থেকে সাতটি মৌচাকের ফ্রেম রাখা হয়। প্রতিটি বাক্সেই একটি করে রাণী মৌমাছি রয়েছে। এই রাণী মৌমাছি প্রতিদিন দুই থেকে তিন হাজার ডিম দেয়। ১৩ দিন পর ওই ডিম থেকে মৌমাছির বাচ্চা বের হয়। এরপর মোট ২৬ দিন তারা সরিষার ফুল থেকে রেণু ও মধুরস সংগ্রহ করে। সেখান থেকেই সপ্তাহে একবার করে মধু সংগ্রহ করা হয়। ৩৯ দিন বয়স হলে মারা যায় মধু সংগ্রহকারী এসব সাধারণ মৌমাছি।
মৌচাষি মোমিনুর আলী বলেন, আমরা সরিষা ক্ষেত থেকে বছরে চার মাস মধু সংগ্রহ করে থাকি। বাকি আট মাস কৃত্রিম পদ্ধতিতে চিনি খাইয়ে মৌমাছিদের পুষিয়ে রাখতে হয়। ডিসেম্বর মাস থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সরিষা ক্ষেত থেকে মধু সংগ্রহ করার উপযুক্ত সময়। প্রতিটি বাক্স থেকে সপ্তাহে ২ থেকে ৫ কেজি পর্যন্ত মধু পাওয়া যায়। উৎপাদিত এসব খাঁটি মধু কিনে নেয় দেশের পরিচিত ব্র্যান্ডগুলো। বাজারে প্রতি কেজি সরিষা ফুলের মধু বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়। সঠিক পরিবেশ ও যত্ন পেলে মণিরামপুর এলাকাটি মধু উৎপাদনের জন্য অনেক সম্ভাবনাময়। সরকারি সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণ বাড়ানো গেলে এ অঞ্চলে মধু উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাবে। এতে মানুষের কর্মসংস্থানও তৈরি হবে।
মণিরামপুর উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি অফিসার শারমিন শাহানাজ বলেন, সরিষা ক্ষেতের পাশে মৌমাছির চাষ হলে ফলন ১০-২০ ভাগ বেড়ে যায়। সরিষার ফলনও ভালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সরিষা ক্ষেত থেকে বিনা খরচে মধু সংগ্রহ লাভজনক। এতে মৌমাছি ব্যবসায়ী যেমন মধু বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন, অন্যদিকে সরিষার ফলনও বাড়ছে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available