রোগীদের জন্য রক্ত সংগ্রহই তার কাজ
বোয়ালমারী (ফরিদপুর) প্রতিনিধি: হেদায়েতুর রাফি ওরফে সুমন রাফি এক উচ্চ শিক্ষিত যুবক। ফরিদপুর জেলার তিন উপজেলা তথা বোয়ালমারী, আলফাডাঙ্গা ও মধুখালির বিভিন্ন অঞ্চলের অসুস্থ রক্তগ্রহীতাদের নিকট রক্তপ্রাপ্তির তিনি যেন এক নির্ভরযোগ্য আশ্রয়স্থল। রোগীদের কাছে রক্ত পৌঁছে দেওয়াই যেন তার ধ্যান, জ্ঞান ও পেশা। রক্ত জোগাড় করাই তার একমাত্র কাজ।বাবা শওকত হোসেন মিয়া ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলার জর্জ একাডেমির গণিত শিক্ষক ছিলেন। ভাই হায়াতুর রাফি নয়ন ঢাকায় জুয়েলারি ব্যবসার সাথে জড়িত। নিজেও ওই ব্যবসার অংশীদার। বোন শারমিন সুলতানা রিতা আমেরিকার নাগরিক।ছোট ভাইবোনের বিয়ে হলেও রক্ত সংগ্রহজনিত সমাজসেবামূলক এক ব্যতিক্রমী অলাভজনক কাজে নিয়োজিত থাকায় সুমন রাফির এখনো বিয়ে করা হয়ে ওঠেনি। অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করার পর মার্কেটিংয়ে এমবিএ সম্পন্ন করার পরেও চাকরির জন্য চেষ্টা করেননি তিনি।২০০২ সাল থেকে নিজ উপজেলা বোয়ালমারী এবং পার্শ্ববর্তী আলফাডাঙ্গা ও মধুখালি উপজেলার অসুস্থ বিশেষ করে অসহায়, দরিদ্রদের জন্য মানবতার হাত প্রসারিত করে চলেছেন। রোগীদের জন্য রক্তের ব্যবস্থা, দুস্থ রোগীদের ঔষধপত্রসহ চিকিৎসার ব্যবস্থা এমনকি নগদ অর্থ ও সাহায্য করেন তিনি।গত ২৩ বছরে রোগীদের জন্য ৫ থেকে ৬ হাজার ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন বলে জানান তিনি। এ যাবত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি খাসজমি ও রাস্তার দুপাশে প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার ফলদ ও বনজ বৃক্ষের চারা রোপণ করেছেন।মানবতার সেবায় নিয়োজিত দীর্ঘ এ সময়ে তিনি প্রতিবন্ধীদের হুইল চেয়ার, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের অর্থ সাহায্য, অসহায় অবহেলিত জনগোষ্ঠীর মৌলিক চাহিদার ব্যবস্থা, পাখিদের নীড়ের ব্যবস্থা, শীতবস্ত্র বিতরণ, মানসিক প্রতিবন্ধীদের চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করা ও খোঁজখবর নেয়ার ক্ষেত্রে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছেন।এছাড়া সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধ এবং ভয়ভীতি প্রদর্শন করে অন্যের জমি দখলের বিরুদ্ধেও সোচ্চার ছিলেন। মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, নারী নির্যাতন বন্ধে করণীয় সম্পর্কে সভা সেমিনারেরও আয়োজন করেন।হেদায়েতুর রাফি ওরফে সুমন রাফি বলেন, এ যাবত আমি ত্রিশ হাজারেরও অধিক লোককে অর্থ সাহায্য করেছি। নিজের জুয়েলারি এবং ঠিকাদারি ব্যবসা থেকে উপার্জিত টাকা দিয়ে আমি এসব সাহায্য করি।তিনি আরও বলেন, ইসলামিক আদর্শ, মানবতার প্রতি দায়বদ্ধতা আর ভালো কাজের প্রতি অনুপ্রাণিত হয়ে এ সেবামূলক কার্যক্রমে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছি।উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সড়কে অবস্থিত মিম ডায়াগনস্টিক সেন্টারের স্বত্বাধিকারী মাসুদ মিয়া বলেন, যাদের রক্তের প্রয়োজন তারা সুমন রাফিকে জানালে তিনি রক্তদাতাদের খুঁজে নিয়ে আসেন। তার কাছে রক্তের সব গ্রুপের ডোনারদের তালিকা আছে। রক্তদাতাদের যাতায়াত খরচ সুমন রাফিই বহন করেন। রক্তদাতাদের নিকট থেকে রক্ত সংগ্রহ এবং অসুস্থ রোগীকে রক্ত প্রদানের সুমন রাফির এ কার্যক্রমের সাথে আমি আমার ডায়াগনস্টিক সেন্টারও সম্পৃক্ত।স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী লিটু সিকদার বলেন, আমার অনেক অসুস্থ আত্মীয়-স্বজনের জন্য রক্ত জোগাড় করে দিয়েছে সুমন রাফি। এক আত্মীয় হেপাটাইটিস-বি রোগে আক্রান্ত ছিল। পরে মারা গেছে। বেঁচে থাকতে তার জন্য নিয়মিত রক্ত যোগাড় করে দিত সুমন। আমরা এজন্য ওর কাছে কৃতজ্ঞ।স্কুল শিক্ষক মুকুল বসু বলেন, অত্র অঞ্চলে সুমন রাফিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি অসুস্থ রোগীদের বিনা পয়সায় রক্ত যোগাড় করে দেন। মানবিক কাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে সুমন রাফির এ সমাজসেবামূলক কাজ নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। তার এ কাজ অনুপ্রেরণা জোগাবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে।