• ঢাকা
  • |
  • রবিবার ৪ঠা কার্তিক ১৪৩২ সন্ধ্যা ০৭:৪৫:১৮ (19-Oct-2025)
  • - ৩৩° সে:
সংবাদ ছবি

চুনিয়ায় গারো সম্প্রদায়ের ওয়ানগালা উৎসব অনুষ্ঠিত

মধুপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি: মধুপুর উপজেলার চুনিয়া গ্রামে গারো সম্প্রদায়ের সাংসারেক আদি ঐতিহ্যের উৎসব ওয়ানগালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।১৬ অক্টোবর বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়ে ৩ দিনব্যাপী এই আয়োজন গতকাল শনিবার শেষ হয়।মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া ক্ষীর নদীর দুপাড়ে পীরগাছা ও চুনিয়া গ্রাম। দুই গ্রামেই গারো সম্প্রদায়ের বসবাস। শালবন, সবুজ ধানের মাঠ আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা এই চুনিয়া গ্রাম ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র।চুনিয়া শুধু প্রাকৃতিক নয়, সাংস্কৃতিক দিক থেকেও পরিচিত। এখানেই বসবাস করতেন গারো সম্প্রদায়ের প্রখ্যাত সাংসারেক পুরোহিত প্রয়াত জনিক নকরেক এবং বিশিষ্ট ব্যক্তি পরেশ মৃ। এই গ্রামকে ঘিরেই কবি রফিক আজাদ রচনা করেছেন তার বিখ্যাত কবিতা ‘চুনিয়া আমার আর্কেটিয়া’।চুনিয়া গ্রামের বনানী আচিক ক্লাবে, থকবিরিরমের সম্পাদক মিঠুন রাগসামের উদ্যোগে আয়োজিত হয় এবারের ওয়ানগালা উৎসব। ৩ দিনব্যাপী আয়োজনে গারো সম্প্রদায়ের আদি ধর্মবিশ্বাস, রীতিনীতি ও সাংস্কৃতিক অনুষঙ্গ উঠে আসে।মিঠুন রাগসাম জানান, আদিকাল থেকে চলে আসা নিয়ম অনুযায়ী এই উৎসব ৩ দিন ধরে চলে। গারো সম্প্রদায়ের সাংসারেক পুরোহিত খামাল লেবেন সাধু রুগালার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করেন।উৎসবের দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ ১৭ অক্টোবর শুক্রবার শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। গারোদের বিশ্বাস অনুযায়ী, শস্যদেবতা মিসি ও শালজংকে নতুন উৎপাদিত ফসল উৎসর্গ করা হয়। এই সময়ে একটি মোরগ উৎসর্গ করে পুরোহিত মন্ত্র পাঠ করে উৎসর্গ অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেন।পরবর্তী পর্বে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যবাহী উপস্থাপনা অনুষ্ঠিত হয়। আজিয়া, রেঁরেঁ, সেরেজিং নামের রীতিতে জয়নাগাছা, সাইনামারী, চুনিয়াসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামের দল অংশ নেয়। এছাড়া গুরিরুয়া, গ্রিকা, চাম্বিল মিশা, সেরজিং পর্বগুলো দর্শকদের বেশ আনন্দ দেয়।প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে এই উৎসবে যুক্ত হয় গারোদের ঐতিহ্যবাহী কুস্তি প্রতিযোগিতা চু বা চুমান্থি। যা সাধারণত ভারতের মেঘালয়ে অনুষ্ঠিত হয়।মাঠের মাঝখানে বাঁশ ও কলাপাতা দিয়ে তৈরি ছায়লা বা সামিয়ানার নিচে এই প্রতিযোগিতা ও আচারিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সাংসারেক রীতির নানা উপকরণও সংরক্ষিত থাকে।উৎসবে অংশ নেওয়া কয়েকজন গারো নারী জানান, নিজেরা নতুন ফসল ভোগ করার আগে তা দেবতা মিসি ও শালজংকে উৎসর্গ করা তাদের পুরানো রীতি। তারা বিশ্বাস করেন এতে তাদের জীবনে মঙ্গল ও সমৃদ্ধি নেমে আসে। তাই প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই ওয়ানগালা উদযাপন করে আসছেন তারা।মমিনপুর গ্রামের অলিক মৃ বলেন, ‘চুনিয়ায় এ বছরের ওয়ানগালা সুন্দরভাবে শেষ হয়েছে। প্রচুর মানুষের সমাগম ছিল। সাংসারেক রীতি অনুসরণ করে আয়োজনটি খুবই চমৎকারভাবে হয়েছে।’সাংসারেক পুরোহিত খামাল লেবেন সাধু জানান, ‘আদি নিয়ম মেনেই তিন দিন ধরে চলে ওয়ানগালা। সাংসারেক বিশ্বাস ও ঐতিহ্য বজায় রেখে আমরা এই উৎসব পালন করেছি।’