মোংলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি: সুন্দরবনের দুবলার চরে আজ থেকে শুরু তিন দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসব। ৩ নভেম্বর সোমবার ভোর থেকে সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের চাঁদপাই ও ঢাংমারী স্টেশন থেকে অনুমতি (পাস) নিয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা যাত্রা শুরু করেছেন দুবলার চরের উদ্দেশে।

সোমবার রাতে দুবলার চরের আলোরকোলে স্থাপিত অস্থায়ী মন্দিরে রাস পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। আর বুধবার ভোরে সাগরে পুণ্যস্নানের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এ বছরের রাস উৎসব।


তবে এবারও উৎসবে থাকছে না সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মেলা। করোনা মহামারির সময় থেকে এই আয়োজন বন্ধ রয়েছে। সেই সঙ্গে হিন্দু ধর্মাবলম্বী ছাড়া অন্য ধর্মের মানুষদের দুবলার চরে যাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পূজার্চনা ও পুণ্যস্নান শেষে পুণ্যার্থীদের নির্ধারিত রুট দিয়ে ফিরে যেতে হবে।
সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘নির্ধারিত রাজস্ব জমা দিয়ে এবং বনবিভাগের অনুমতি নিয়ে পূর্বনির্ধারিত রুটেই পুণ্যার্থীরা রাস উৎসবে যেতে পারবেন। বনের প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ, হরিণ শিকার ও প্লাস্টিক বর্জ্য দূষণরোধে এবারও কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।’
তিনি আরও জানান, শুধুমাত্র সনাতন ধর্মাবলম্বী পুণ্যার্থীদের প্রবেশের অনুমতি রয়েছে; পর্যটক বা অন্য কেউ যেতে পারবেন না।
ইতিহাস অনুযায়ী, ১৮শ শতকের শেষভাগে বা ১৯শ শতকের শুরুর দিকে দুবলার চরে রাস পূজার প্রচলন ঘটে। হিন্দু সন্ন্যাসী হরভজন দাস রাস পূর্ণিমার তিথিতে সেখানে পূজা অর্চনা ও সাগরে পুণ্যস্নানের প্রথা শুরু করেন। পরবর্তীতে তার অনুসারীদের মাধ্যমে ধীরে ধীরে এটি বৃহৎ ধর্মীয় উৎসবে রূপ নেয়, যা আজ ‘দুবলার চরের রাস মেলা’ নামে পরিচিত।
বর্তমানে দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপ আয়োজিত এই উৎসবটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় অনুষ্ঠান হিসেবে উদযাপিত হয়ে আসছে।
রাস উৎসব উদযাপন কমিটির সভাপতি ও দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. কামাল উদ্দিন আহমেদ জানান,
“৩ নভেম্বর থেকে মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। বনবিভাগের অনুমতি নিয়ে আলোরকোলে স্থাপিত অস্থায়ী মন্দিরে রাধা–কৃষ্ণের পূজা অনুষ্ঠিত হবে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত ভক্তরা মনোবাসনা পূরণের আশায় অংশ নেবেন এই পূজায়। ৫ নভেম্বর ভোরে সাগরের প্রথম জোয়ারে পুণ্যস্নান শেষে তারা নিজ নিজ গন্তব্যে ফিরে যাবেন।”
তিনি আরও বলেন, উৎসবকে ঘিরে যাতে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে, সে বিষয়ে কমিটি সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছে।
বনবিভাগের তথ্যমতে, প্রতি পুণ্যার্থীকে তিন দিনের জন্য ৭৫ টাকা, নিবন্ধিত প্রতিটি ট্রলারের জন্য তিন দিনে ৩০০ টাকা, অনিবন্ধিত ট্রলারের জন্য ১ হাজার টাকা এবং প্রতিটি ট্রলারের অবস্থান ফি প্রতিদিন ৩০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available