লাইফস্টাইল ডেস্ক: কলার মোচা, যা কলার ফুল নামেও পরিচিত, শুধু একটি সুস্বাদু সবজি নয়, এটি বহুবিধ ঔষধি গুণাগুণ সম্পন্ন একটি প্রাকৃতিক উপাদান। কলার গাছের এই অংশটি বহু প্রাচীন কাল থেকেই এশিয়া এবং আফ্রিকার বহু দেশে খাদ্য এবং লোক-ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। দেখতে অনেকটা বেগুনি রঙের ডাটাযুক্ত ফণাতুল্য এই সবজিটি স্বাদে সামান্য কষাটে হলেও এর পুষ্টিগুণ এটিকে 'সুপারফুড'-এর মর্যাদা দিয়েছে।

কলার ফুলের অসাধারণ স্বাস্থ্য উপকারিতা
কলার মোচায় রয়েছে ফাইবার, প্রোটিন, ভিটামিন-এ, সি, ই, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন এবং জিঙ্কের মতো গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান।


এর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলো নিচে তুলে ধরা হলো:
১. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
কলার মোচায় থাকা উচ্চ পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইবার রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে অত্যন্ত কার্যকর। এটি ইনসুলিনের কার্যকারিতা উন্নত করে এবং গ্লাইসেমিক নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে সাহায্য করে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটিকে একটি আদর্শ খাদ্য করে তোলে।
২. মেনস্ট্রুয়াল পেইন এবং রক্তপাত হ্রাস
মহিলাদের জন্য কলার ফুল একটি আশীর্বাদস্বরূপ। এটি রান্না করে দই বা টক-দইয়ের সঙ্গে খেলে মাসিক বা পিরিয়ডের সময় হওয়া অতিরিক্ত রক্তপাত এবং ব্যথা (Dysmenorrhea) কমাতে সাহায্য করে। এর ম্যাগনেসিয়াম উপাদান মেজাজ ভালো রাখতেও সহায়ক।
৩. হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়
এতে বিদ্যমান ট্যানিন, ফ্ল্যাভোনয়েড এবং অন্যান্য শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের ফ্রি র্যাডিক্যালগুলির সাথে লড়াই করে। নিয়মিত কলার মোচা গ্রহণ করলে উচ্চ রক্তচাপ কমে এবং রক্তনালী সুস্থ থাকে, যা সামগ্রিকভাবে হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।
৪. হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর
ফাইবার বা আঁশে ভরপুর হওয়ায় কলার মোচা হজম প্রক্রিয়াকে মসৃণ করে। এটি অন্ত্রের স্বাস্থ্য বজায় রাখে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে। এটি প্রিবায়োটিক হিসাবেও কাজ করতে পারে, যা পেটের ভালো ব্যাকটেরিয়াকে সাহায্য করে।
৫. অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা প্রতিরোধ
আয়রনের একটি চমৎকার উৎস হওয়ায় কলার মোচা রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। যারা রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়াতে ভুগছেন, তাদের জন্য এই সবজিটি খুবই উপকারী।
৬. মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ কমায়
কলার মোচায় থাকা ম্যাগনেসিয়াম একটি প্রাকৃতিক স্ট্রেস রিলিভার হিসেবে কাজ করে। এটি স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত করে এবং উদ্বেগ ও মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
৭. স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য উপকারী
প্রসবের পর স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য কলার মোচা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি স্তনদুগ্ধের উৎপাদন বাড়াতে এবং প্রসব-পরবর্তী রক্তক্ষরণ কমাতে সহায়তা করে।
কলার ফুল ব্যবহারের কিছু প্রচলিত পদ্ধতি
কলার মোচা সাধারণত বিভিন্নভাবে রান্না করা যায়। এর কষাটে ভাব দূর করার জন্য এটিকে সাধারণত সামান্য হলুদ ও নুন মেশানো জলে অল্প সেদ্ধ করে বা ভাপিয়ে নেওয়া হয়।
তোরান (Thorans): দক্ষিণ ভারতে এটি মশলা এবং নারকেল দিয়ে একটি শুকনো ভাজি বা তরকারি হিসেবে তৈরি করা হয়।
ডালনা/ঘন্ট: বাঙালি রান্নায় এটি চিংড়ি মাছ বা ডালের সঙ্গে ঘণ্ট বা ডালনা আকারে রান্না করা হয়।
স্যুপ/সালাদ: কিছু কিছু সংস্কৃতিতে এর ভিতরের অংশ কুচি করে স্যুপ বা সালাদে ব্যবহার করা হয়।
কলার মোচা খাওয়ার আগে এর বাইরের শক্ত পাতাগুলি ফেলে দিতে হয় এবং ভেতরের হালকা হলুদ অংশটুকু ব্যবহার করা উচিত। মোচার মধ্যে থাকা ছোট, শক্ত ও প্লাস্টিকের মতো অংশগুলি (যা 'আই-লিফ' বা 'চোখ' নামে পরিচিত) ফেলে দিতে ভুলবেন না।
কলার ফুল হলো এমন একটি সবজি, যা একই সাথে স্বাদে বৈচিত্র্য আনে এবং শরীরকে গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টিতে পূর্ণ করে। এটিকে আপনার খাদ্যের তালিকায় যুক্ত করে সহজেই স্বাস্থ্যকর জীবনধারা বজায় রাখতে পারেন।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available