মাদারীপুর প্রতিনিধি: মাদারীপুরে শ্বশুর বাড়ির মানষিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে সুমাইয়া আক্তার (১৮) নামে এক ইতালি প্রবাসীর স্ত্রীর আত্মহত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার পরপরই গাঢাকা দিয়েছে অভিযুক্তরা।

৫ নভেম্বর বুধবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ময়নাতদন্ত শেষে নিহতের মরদেহটি তার বাবার বাড়ি জেলার রাজৈর উপজেলার বাজিতপুর ইউনিয়নের কিসমদ্দি বাজিতপুর গ্রামে দাফন করা হয়। নিহত সুমাইয়া ওই গ্রামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী নাসির হাওলাদারের মেয়ে।


এর আগে, মঙ্গলবার মধ্যরাত ২টার দিকে কিসমদ্দি বাজিতপুর গ্রামে সুমাইয়ার বাবার বাড়ির শয়নকক্ষ থেকে তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে রাজৈর থানার পুলিশ।
পরিবার ও স্থানীয়রা জানায়, মাত্র ১৬ মাস আগে মাদারীপুর সদর উপজেলার কুনিয়া ইউনিয়নের ভরিয়াপাড়া গ্রামের সরোয়ার হাওলাদারের ছেলে ইতালি প্রবাসী জহিরুল হাওলাদারের সাথে রাজৈর উপজেলার বাজিতপুর ইউনিয়নের কিসমদ্দি বাজিতপুর গ্রামের নাসির হাওলাদারের মেয়ে সুমাইয়া আক্তারের বিয়ে হয়। বিয়ের পর স্ত্রীকে ইতালি নিয়ে যাওয়ার কথা বলে জহিরুল। পরে সুমাইয়াকে ইতালি নিতে বাধা দেয় জহিরুলের পরিবার। এ নিয়ে পারিবারিক কলহের সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে বিয়ের সময় দেওয়া সুমাইয়ার ১০ ভরি স্বর্ণালংকার আত্মসাৎ করে এবং মানষিক নির্যাতন শুরু করে শ্বশুর, শাশুড়ি ও ননদ বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী পরিবারের। এজন্য বেশ কিছুদিন যাবত বাবার বাড়িতে বসবাস করে আসছিল সুমাইয়া। মঙ্গলবার রাত দেড়টার দিকে স্বামীর সাথে মোবাইল ফোনে ঝগড়া হলে নিয়মিত মানষিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে ফ্যানের সাথে ওড়না পেচিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি।
নিহত সুমাইয়ার মা রুমি বেগম জানান, ঝগড়ার পর রাত দেড়টার দিকে ইতালি থেকে জহিরুল আমাকে ফোন দিয়ে বলে আপনার মেয়ে ৩ ঘন্টা যাবত ফোন ধরতেছে না। এ কথা শুনেই সুমাইয়ার রুমে গিয়ে দেখি আমার মেয়ে আর দুনিয়াতে নাই। বিয়ের পর থেকেই আমার মেয়েকে তার শ্বশুর, শাশুড়ি ও ননদ মিলে বিভিন্ন ভাবে নির্যাতন করে আসছিল। এজন্য আমার মেয়ে তার শশুর বাড়িতে থাকতে পারে নাই। আমার মেয়ের বিয়ের সময় দেওয়ার ১০ ভরি স্বর্ণালংকারও নিয়ে গেছে। ওরা আমার মেয়েকে হত্যা করেছে। আমি এই হত্যাকাণ্ডের সঠিক বিচার চাই।
সুমাইয়ার বাবা নাসির হাওলাদার অভিযোগ করে বলেন, আমার মেয়েকে বিয়ের পর ইতালি নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জহিরুল তার পরিবারের বাধায় নেয় নাই। আমরা গরিব বলে আমার মেয়েকে সব সময় মানষিক নির্যাতন করতো তারা। শ্বশুর বাড়ির লোকজনের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে মরে গেছে। আমার মেয়ে মরার পর কেউ দেখতেও আসে নাই। আমি চাই এমন নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা আর যেন কারো সন্তানের সাথে না ঘটে, সেজন্য সরকার ও প্রশাসনের কাছে সঠিক বিচার দাবি করছি।
স্থানীয় সালিশবর্গের একজন আলামিন হাওলাদার জানান, বিদেশ যাওয়া ও স্বর্ণালংকার নিয়ে সুমাইয়া ও তার শ্বশুর বাড়ির মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। এরপর প্রায় দুই মাস আগে আমরা তার শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে সবার সাথে কথা বিষয়টি মিমাংসার চেষ্টা করেছিলাম। সুমাইয়া বলেছিল, হয় আমাকে ছাড়াই নেও না হলে আমি গলায় দড়ি দেবো। আজ সেই কাজটাই করলো। আমরা এর বিচার চাই।
মাদারীপুরের রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাসুদ খান জানান, মরদেহটি ময়নাতদন্ত শেষে মাদারীপুর সদর হাসপাতাল থেকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available