অনলাইন ডেস্ক: নাক দিয়ে পানি পড়া, শরীর ব্যথা, হালকা জ্বর, কাশি, গলা খুসখুস, মাথাব্যথা আর ক্লান্তি এই উপসর্গগুলো দেখলেই বুঝে নিতে হয়, সাধারণ সর্দি-কাশি এসে হাজির। ঋতু পরিবর্তন, ঠান্ডা আবহাওয়া বা ভাইরাস সংক্রমণ যে কারণেই হোক, ফ্লু যেন পিছু ছাড়ে না। ঘরোয়া টোটকা থেকে শুরু করে নানা ওষুধ সবই চলে আরাম পাওয়ার আশায়। কিন্তু কয়েক দিন ভোগান্তি ছাড়া উপায় থাকে না। তাহলে কি এমন কোনও উপাদান আছে, যা একটু হলেও দ্রুত সুস্থ হতে সাহায্য করতে পারে? সাম্প্রতিক সময়ে সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে অনেকেই ভরসা করছেন জিংকের সাপ্লিমেন্টের ওপর। কিন্তু সত্যিই কি জিংক সর্দি-কাশি সারিয়ে তোলে? এই বিষয়ে এনডিটিভিতে কথা বলেছেন পুনের অ্যাপোলো হাসপাতালের কনসালট্যান্ট জেনারেল ফিজিশিয়ান ডা. সম্রাট শাহ।

ডা. শাহের মতে, জিংক কোনও জাদুকরী ওষুধ নয়। এটি সর্দি পুরোপুরি সারায় না। তবে সঠিকভাবে ও সঠিক সময়ে ব্যবহার করলে কিছু ক্ষেত্রে উপকার মিলতে পারে। তিনি জানান, বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে জিংক সর্দির স্থায়িত্ব একদিন পর্যন্ত কমাতে পারে। বিশেষ করে গলা ব্যথা বা নাকের জ্বালাপোড়া কিছুটা কমাতে সাহায্য করতে পারে।


আসলে সাধারণ সর্দি একটি ভাইরাসজনিত এবং সেলফ লিমিটিং রোগ অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই এটি নিজে নিজে সেরে যায়। জিংক শুধু উপসর্গের সময়টা সামান্য ছোট করতে পারে, এর বেশি কিছু নয়।
কখন জিংক খেলে উপকার বেশি
এই ক্ষেত্রে সময়টাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ডা. শাহ জানান, সর্দির উপসর্গ শুরু হওয়ার প্রথম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জিংক খেলে তবেই কিছুটা ফল পাওয়া যেতে পারে। এই সময় পেরিয়ে গেলে ভাইরাস শরীরে পাকাপোক্তভাবে বসে যায়, তখন জিংক তেমন কাজে আসে না।
এছাড়া সব ধরনের জিংক সমান কার্যকর নয়। গবেষণায় দেখা গেছে, জিংকের চুষে খাওয়ার ট্যাবলেট বা সিরাপের চেয়ে ভালো কাজ করে। কারণ জিংক লজেন্স সরাসরি গলা ও নাকের ভেতরের অংশে পৌঁছায় যেখানে ভাইরাস শুরুতে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে।
যে কোন উপকারী জিনিসই অতিরিক্ত হলে ক্ষতিকর। জিংকও তার ব্যতিক্রম নয়। ডা. শাহ বলেন, বেশিরভাগ ইতিবাচক গবেষণায় দৈনিক ৭৫–৯০ মিলিগ্রাম এলিমেন্টাল জিংক স্বল্প সময়ের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। এর বেশি মাত্রা বা দীর্ঘদিন খেলে বমি ভাব, মুখে ধাতব স্বাদ, পেটের অস্বস্তি দেখা দিতে পারে। শুধু তাই নয়, অতিরিক্ত জিংক শরীরে কপার শোষণে বাধা দেয় এবং ইমিউন সিস্টেমের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। তাই কিছু গবেষণায় আবার জিঙ্কের কোনো উপকারই পাওয়া যায়নি।
বিশেষ সতর্কতা প্রয়োজন তাদের জন্য যারা চুল বা ত্বকের জন্য আগে থেকেই জিংক খান, যারা দীর্ঘদিনের ওষুধ সেবন করছেন বা নির্দিষ্ট কিছু অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করছেন। ডা. শাহের বলেন, ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া নিয়মিত বা দীর্ঘদিন জিংক নেয়া উচিত নয়।
সর্দি-কাশিতে ভুগলে দ্রুত আরাম পাওয়ার আশায় জিঙ্কের দিকে ঝোঁক স্বাভাবিক। কিন্তু মনে রাখতে হবে জিংক কোনও চিকিৎসা নয়, বরং সহায়ক মাত্র। সঠিক সময়ে, সঠিক মাত্রায় এবং চিকিৎসকের পরামর্শে নিলে কিছুটা উপকার মিলতে পারে। তাই সর্দি-কাশিতে ভুগলে নিজে নিজে সাপ্লিমেন্ট খাওয়ার আগে একবার চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available