রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি : শখ করে বাবার সঙ্গে সাগরে গিয়েছিল ১২ বছরের শিশু সিয়াম। মাছ ধরা দেখবে-এই ছিল তার আবদার। কিন্তু সেই আনন্দের যাত্রাই পরিণত হলো জীবনের শেষ যাত্রায়। পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী থেকে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ট্রলারডুবির ঘটনায় বাবা শামীম ও তার শিশু ছেলে সিয়ামের মৃত্যু হয়েছে।

ডুবে যাওয়া ট্রলারটি বৃহস্পতিবার রাতে উদ্ধার করে উপজেলার বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নের চরগঙ্গা স্লুইসের ঘাটে আনা হয়। এ সময় ট্রলারের ভেতর থেকেই উদ্ধার করা হয় শামীমের মরদেহ। অপরদিকে, পরদিন শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ট্রলারডুবির ঘটনাস্থল বঙ্গোপসাগরে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করা হয় শামীমের ছেলে সিয়ামের মরদেহ। পরে দুপুর আড়াইটার দিকে সিয়ামের মরদেহ বাড়িতে এনে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে কোস্টগার্ড।


নিহত শামীম উপজেলার বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নের চরগঙ্গা বাঁধঘাট এলাকার বাসিন্দা এবং ট্রলার মালিক মো. সিদ্দিক জোমাদ্দারের ছেলে। শিশু সিয়াম ছিল সিদ্দিক জোমাদ্দারের নাতি।
শিশু সিয়াম চরগঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। কিছুদিন আগেই সে চতুর্থ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা দিয়েছে। পরীক্ষা শেষে বাবার সঙ্গে মাছ ধরা দেখার আগ্রহ থেকেই সে সাগরে যাওয়ার আবদার করে। বাবাও আদরের ছেলেকে সঙ্গে নিয়েই ট্রলারে ওঠেন। কিন্তু সেই যাত্রা আর ঘরে ফেরার সুযোগ দেয়নি।
উদ্ধার হওয়া জেলে রাব্বি, শাওন ও রাশেদ বলেন, বুধবার রাতে বঙ্গোপসাগরের পাইপ বয়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। তারা জানান, গত রোববার চরগঙ্গা বাঁধঘাট বাজার এলাকা থেকে সিদ্দিক জোমাদ্দারের মালিকানাধীন একটি ট্রলারে মালিক সিদ্দিক জোমাদ্দার, তার ছেলে শামীম, নাতি সিয়ামসহ মোট ছয়জনকে নিয়ে বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকারে রওনা হয়। টানা দুই দিন মাছ ধরার পর বুধবার রাতে ট্রলারটি পাইপ বয়া এলাকায় নোঙর করে রাখা হয়। হঠাৎ ঝড়ো বাতাসের কারণে ট্রলারের নিচের অংশ ছিদ্র হয়ে পানি ঢুকতে শুরু করে। একপর্যায়ে ট্রলারটি কাত হয়ে অল্প সময়ের মধ্যেই ডুবে যায়। দুর্ঘটনার সময় শিশু সিয়াম ও শামীম ট্রলারের ভেতরেই আটকা পড়েন।
এ সময় মো. সিদ্দিক জোমাদ্দার (৫৭), মো. শাওন (২৫), রাব্বী (১৯) ও রাশেদ (২১) ট্রলারের ভাসমান অংশ ধরে পাঁচ-ছয় ঘণ্টার বেশি সময় সাগরে ভেসে থাকেন। পরে বৃহস্পতিবার ভোরে কাছাকাছি থাকা একটি ট্রলার ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাদের জীবিত উদ্ধার করে। কিন্তু ট্রলারের ভেতরে থাকা শামীম ও তার শিশু সন্তান মারা যান।
ছেলে ও নাতিকে একসঙ্গে হারিয়ে শোকে কাতর ট্রলার মালিক মো. সিদ্দিক জোমাদ্দার বলেন, শখের বশে নাতি বাবার সঙ্গে সাগরে গিয়েছিল। আমি একসঙ্গে আমার ছেলে ও নাতিকে হারালাম।
রাঙ্গাবালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শিরাজুল ইসলাম জানান, হঠাৎ ঝড়ো হাওয়ার কারণে ট্রলারটি ডুবে যায়। চারজনকে অন্য ট্রলারের জেলেদের সহায়তায় জীবিত উদ্ধার হলেও বাবা ও শিশু সন্তান ট্রলারের ভেতরে আটকে যায়। পরে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এঘটনায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। বিষয়টি নৌপুলিশ তদন্ত করছে৷
এ ব্যাপারে রাঙ্গাবালী নৌপুলিশ কেন্দ্রের ইনচার্জ মো. নূরে জায়েদ বলেন, ট্রলারডুবিতে বাবা ছেলের মৃত্যুর ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। আমরা তাদের বাড়িতে গিয়েছি। বাবা-ছেলের মরদেহ দাফন করা হয়েছে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available