কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি: শর্ত অনুযায়ী মুজাব্বিদ সনদ অর্জন না করেই দীর্ঘ দুই দশক ধরে চাকরি করে সরকারি কোষাগার থেকে বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য ভাতা উত্তোলন করে আসছিলেন জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার পাঁচগ্রাম জান্নাতুল নূরী দাখিল মাদ্রাসার ইবতেদায়ী শাখার ক্বারী শিক্ষক মো. আব্দুল গফুর। এ ঘটনায় তার নিয়োগ অবৈধ বলে ১৩ লক্ষ টাকা ফেরত দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু নির্দেশনার সাত বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো টাকা ফেরতের কোনো উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। বরং ওই শিক্ষক মাদ্রাসার সুপারের সাথে পরামর্শ করে তার পদ থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন। যাতে করে তাকে সরকারি কোষাগারের টাকা ফেরত না দিতে হয়।
মাদ্রাসা সূত্রে জানা গেছে, পাঁচগ্রাম জান্নাতুল নূরী দাখিল মাদ্রাসার ইবতেদায়ী শাখার ক্বারী শিক্ষক হিসেবে মো. আব্দুল গফুর ১৯৯৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর যোগদান করেন। চাকরির শর্ত অনুযায়ী নিয়োগের সময় তার মুজাব্বিদ সনদ ছিল না। কমিটি তাকে যোগদানের পর দুই বছরের মধ্যে মুজাব্বিদ সনদ অর্জনের সময় বেঁধে দেয়। কিন্তু তিনি সনদ অর্জন করেননি। সনদ অর্জন না করেই চাকরি জীবনে তিনি নিয়মিত সরকারি কোষাগার থেকে বেতন-ভাতা উত্তোলন করে আসছিলেন।
বিভিন্ন সময়ের অডিট রিপোর্ট সূত্রে জানা যায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের তদন্তে শিক্ষক আব্দুল গফুরের নিয়োগ অবৈধ প্রমাণিত হয়। ২০০২ সালের ১ মে থেকে ২০১৮ সালের ৩০ মে পর্যন্ত তিনি সরকারের কাছ থেকে ৯ লাখ ১৪ হাজার ১৫০ টাকা বেতন-ভাতা গ্রহণ করেছেন। ২০২২ সালের ১৮ এপ্রিল মন্ত্রণালয় এই অর্থ ফেরত দেয়ার নির্দেশ দেয়। টাকা ফেরত না দেওয়ায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় আবারও ২০২৩ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ওই টাকা ফেরত চেয়ে পত্র প্রেরণ করেন। এরপরও তিনি ওই টাকা ফেরত না দিয়ে উল্টো সুপারের সাথে যোগসাজস করে বেতন-ভাতার টাকা নিয়মিত উত্তোলন করে আসছিলেন। যা গত বছরের ৫ আাগস্টের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় উল্লেখ ছিল, ভবিষ্যতে আব্দুল গফুর কোনো সরকারি সুবিধা গ্রহণ করলে মাদ্রাসার সুপার মো. আনোয়ার হোসেন দায়ী থাকবেন এবং পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে সুপার মো. আনোয়ার হোসেনের মাদ্রাসায় গেলে তিনি অফিস কক্ষে প্রবেশ করতে নিষেধ করেন। এরপর বাইরে এসে তর্কে জড়ান। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, ‘আব্দুল গফুর স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন। এর বাইরে বলার কিছুই নেই।’
অভিযুক্ত ক্বারি আব্দুল গফুর জানান, ‘এ বিষয়ে সুপার তাকে কোনো নির্দেশনা প্রদান করেননি। পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের পরিদর্শন প্রতিবেদনের বিষয়েও তিনি কিছুই জানতেন না। সে কারণে তাঁর মুজাব্বিদ সনদ অর্জন সম্ভব হয়নি।’ অবৈধভাবে টাকা উত্তোলন এবং সেই টাকা ফেরতের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘চাকরি করেছি, বেতন পাইছি, ফেরত দিবো কেন? যতই চিঠি দেক, আমি চাকরি থেকে অব্যাহতি নিয়েছি। যা হয় হোক।’
মাদ্রাসার সভাপতি আনজুম আলী বলেন, ‘আড়াই মাস আগে আমি এই কমিটির সভাপতি হয়েছি। এরমধ্যে একদিন মাদ্রাসায় সভা করেছি। এখন পর্যন্ত সুপার বা অন্যরাও কেউ এ বিষয়ে কিছু আমাকে জানাইনি। সুপারের কাছ থেকে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কাজী মনোয়ারুল হাসান বলেন, ‘আব্দুল গফুরকে মুজাব্বিত সনদ অর্জনের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সে সেটা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছেন। প্রতিষ্ঠান প্রধানও এর দায় এড়াতে পারেন না। চাকরি থেকে অব্যাহতি নিলেও তাকে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ মেনে টাকা ফেরত দিতেই হবে। তা না হলে মন্ত্রণালয় তাঁর বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেবে।’
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রুহুল আমিন বলেন, ‘সকারি অর্থ আত্মসাৎ কোনোভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। আব্দুল গফুরের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available